আমাদের শখের কবুতর

শান্তির প্রতীক, যোগাযোগ, গোয়েন্দাকর্ম ও রাজকন্যার মনের কথা রাজপুত্রকে পৌঁছে দিত যে পাখি, তা হলো আমাদের গৃহপালিত কবুতর। গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের ইট-কাঠের দালান বাড়িতেও কবুতর পালন বেশ জনপ্রিয়। অল্প শ্রম ও স্বল্প ব্যয়ে শুধু আনন্দের খোরাকই না পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগও সৃষ্টি করছে কবুতর। ১.৫ লাখ টাকা জোড়া কবুতরও আছে আমাদের এই দেশে।

জাত

বর্তমান পৃথিবীতে ২০০-৩০০ জাতের কবুতর রয়েছে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে হোয়াইট কিং, টেক্রেনা, সিলভার কিং, হামকাচ্চা, ডাউকা, কাউরা, গোলা, গোলী, পক্ব, গিরিবাজ, লক্ষণ ইত্যাদি যা ভালো মাংস দেয়। শৌখিন লোকেরা আবার আমোদ-ফুর্তির জন্য ময়ূরপক্ষী, সিরাজী, লহোরী, ফ্যানটেইল, মুকি, জেকোভিন, টে¤পলার, ম্যাকপাইপুটার ইত্যাদি কবুতর পুষে থাকে। আর আমাদের দেশে জনপ্রিয় কবুতরের একটি জাত হচ্ছে জালালি কবুতর।

জীবনচক্র

পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর জোড়া বেঁধে আজীবন একসাথে বাস করে। এদের জীবনকাল ১২ থেকে ১৫ বছর। ৫ থেকে ৬ মাস বয়সে স্ত্রী কবুতর ডিম পাড়া শুরু করে। ২৮ দিন পরপর ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুইটি ডিম দেয় এবং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত দেয়া ডিমে বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা সক্রিয় থাকে। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে ১৭ থেকে ১৮ দিন সময় লাগে। ডিমে তাপ দেয়ার ১৫-১৬ দিনের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরেরই খাদ্য থলিতে দুধ জাতীয় বস্তু তৈরি হয়, যা খেয়ে বাচ্চারা ৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। ১০ দিন পর্যন্ত তারা বাচ্চাকে ঠোঁট দিয়ে খাওয়ায় এরপর বাচ্চারা দানাদার খাদ্য খেতে আরম্ভ করে।

খাবার

জাত ভেদে কবুতরের খাবারের ধরন ভিন্ন। গোলা প্রজাতির কবুতর সাধারণত সব ধরনের শস্যদানাই খায়। আবার গিরিবাজ কবুতরে খায় ধান, গম, সরিষা, তিসি, ভুট্টা, কুসুম ফুলের বিচি ইত্যাদি। ফেন্সি কবুতর ছোলা বুট, গম, খুব পছন্দ করে। প্রতিটি কবুতর দৈনিক গড়ে ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খেয়ে থাকে। কবুতর ছানার দ্রুত বৃদ্ধি, হাড় শক্ত এবং বয়ষ্ক কবুতরে সুস্বাস্থ্যর জন্য ঝিনুকের চূর্ণ, চুনাপাথর, কাঠকয়লার চূর্ণ, হাড়ের গুঁড়ো, লবণ এসব মিশিয়ে গ্রিট মিকচার তৈরি করে খাওয়ানো প্রয়োজন।

বাসস্থান

কবুতরের থাকার ঘরটি উঁচু করে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখিদের নাগালের বাইরে থাকে। ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিজোড়া কবুতরের জন্য ৩০ সেমি. চওড়ার এবং উচ্চতায় ৩০ সেমি. মাপের খোঁপ বানাতে হবে। কবুতরের ঘর পাশাপাশি বা কয়েকতলা বিশিষ্ট করা যেতে পারে। প্রতিটি খোপের জন্য একটি করে দরজা থাকবে। প্রতিমাসে ১-২ বার করে ঘরে কবুতরের বিষ্টা পরিষ্কার করতে হবে। খাবার ও পানির পাত্র কবুতরের ঘরের কাছেই রাখতে হবে।

রোগবালাই

কবুতরের একটি অতিপরিচিত রোগ হলো রানিক্ষেত। এটি ভাইরাসজনিত রোগ, এই জন্য প্রতিষেধক টিকা দিতে হয়। তাছাড়া,বসন্ত, আমাশয়,কৃমি এই সব রোগ মাঝে মাঝে দেখা দেয়। এ ক্ষেতে বসন্তের জন্য পিজিয়ন পক্স টিকা, আমাশয়ের জন্য এমবাজিন , কৃমির জন্য মেবেন ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। ঢাকার গুলিস্তানের কাছে ফুলবাড়িয়ায় অবস্থিত জাতীয় পশু হাসপাতালে কবুতরের যাবতীয় চিকিৎসা সেবা পাওয়া যায়।

কোথায় পাবেন

কাঁটাবনে কিছু স্থায়ী দোকান আছে যেখানে সারা সপ্তাহ কবুতর ও তার খাবার পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রতি শুক্রবার গুলিস্তানের কাপ্তানবাজারে কবুতর এবং তার খাবারের বিশাল হাট বসে। এখানে দেশি-বিদেশি প্রায় সব ধরনের কবুতর পাওয়া যায়। এ ছাড়া জিঞ্জিরায় শুক্রবারে হাট বসে।

প্রশিক্ষণ

কবুতর পালন সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় প্রাণিস¤পদ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে পশু কর্মকর্তা অথবা উপজেলা প্রাণিস¤পদ অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *