কবুতর পালন লাভজনক

গৃহপালিত পাখির মধ্যে কবুতর অন্যতম একটি। এর মাংস খুবই সুস্বাদু এবং এতে প্রোটিনের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে বেশি। অনেকেই শখের বশে কবুতর পালন করে। কেউ কেউ বাণিজ্যিকভাবেও কবুতর পালন শুরু করেছে। কারণ কবুতর পালন খুবই লাভজনক। উন্নতজাতের প্রতি জোড়া কবুতর ২ হাজার থেকে প্রায় ১ লাখ টাকায়ও বিক্রি হয়।

জীবনকাল ও বংশবৃদ্ধিপ্রতি জোড়া কবুতরে একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী কবুতর থাকে। এরা ২০-৩০ বছর পর্যন্তও জীবিত থাকে। এরা ডিম পাড়ে এবং পুরুষ ও স্ত্রী উভয় কবুতরই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোঁটায়। মোটামুটি ১৮ দিন ডিমে তা দেয়ার পর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। একজোড়া কবুতর থেকে বছরে ১০-১২ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়। বাচ্চা ৫-৬ মাস বয়সে আবার ডিম দেয়া শুরু করে।

সুবিধাসমূহকবুতর সহজেই পোষ মানে এবং পালন খরচও অনেক কম। রোগ-ব্যাধিও তুলনামূলকভাবে খুবই কম হয়ে থাকে। চার সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চা খাওয়া বা বিক্রি করার উপযোগী হয়। অল্প জায়গাতেই পালন করা যায়।

প্রতিপালন ব্যবস্থাপনাকবুতর মুক্ত বা খাঁচায় উভয় উপায়েই পালন করা যায়। বাঁশ বা কাঠ দিয়ে ঘর তৈরি করে দিলে অনায়াসে কবুতর বসবাস করতে পারে। এমনকি গ্রামের বাড়ির চালের কোণায় ঝুড়ি বেঁধে দিলে সেখানেও কবুতর বসবাস করে। এ ক্ষেত্রে ডিম ফোটার হার প্রায় ৯৮%। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটতে প্রায় ১৮ দিন সময় লাগে। বাচ্চাকে খাওয়ানোর জন্য কবুতরের প্রাকৃতিকভাবে দুধ উৎপন্ন হয় যাতে পানি থাকে ৭০%, আমিষ থাকে ১৭.৫%, চর্বি থাকে ১০%, খনিজ পদার্থ থাকে ২.৫%। দৈহিক ওজন সাধারণত ৪০০-৫০০ গ্রাম হয়ে থাকে। দেহের তাপমাত্রা ৩৮.৮-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জাতআমাদের দেশে ১শ’টিরও বেশি জাতের কবুতর রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে কিছু বিদেশি কবুতরও দেখা যায়। জাতগুলো হলো- গোলা, গোলি, ময়ূরপঙ্খী, ফ্যানটেল, টাম্বলার, লোটান, লাহরি, কিং, জ্যাকোবিন, মুকি, সিরাজী, গ্রীবাজ, চন্দন প্রভৃতি।

খাবার তালিকাকবুতরের খাদ্যে পরিমাণমতো আমিষ, চর্বি, শর্করা, ভিটামিন, খনিজ ইত্যাদি উপাদান থাকা উচিত। একটি কবুতর প্রতিদিন সাধারণত ৩০-৫০ গ্রাম খাবার গ্রহণ করে। শীতকালে প্রতিদিন পানি গ্রহণের পরিমাণ ৩০-৬০ মিলিলিটার এবং গ্রীষ্মকালে ৬০-১০০ মিলি।

শস্যদানাকবুতরের প্রধান খাবার শস্যদানা। যেমন- গম, ভুট্টা, যব, মটর, খেসারি, সরিষা, চাল, ধান, কলাই ইত্যাদি।

বাণিজ্যিক খাদ্যবাণিজ্যিক খাবারের সাথে অস্থিচূর্ণ বা চুনাপাথর বা ঝিনুকের গুঁড়া, ভিটামিন বা এমাইনো অ্যাসিড প্রিমিক্স, লবণ ইত্যাদিও মিশ্রিত করা হয়।

রোগ ও টিকাকবুতরের রোগ-ব্যাধি তুলনামূলক কম হয়। সচরাচর কবুতরের যে রোগগুলো হয়ে থাকে, তা হলো রাণীক্ষেত ও পক্স। এছাড়া পরজীবী দ্বারাও আক্রান্ত হতে পারে। এজন্য সময়মতো টিকা প্রদান করতে হবে এবং জীব নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলতে হবে। নিয়মিত সুষম খাদ্য দিলে এবং পর্যাপ্ত আলো, বাতাসের ব্যবস্থা থাকলে রোগ-ব্যাধি কম হয়ে থাকে।

কবুতরের ব্যবহার সেই সুদূর প্রাচীনকাল থেকে। চিঠি আদান-প্রদানের জন্যও তখন কবুতর ব্যবহার করা হতো। এখনও কবুতরের চাহিদা ব্যাপক। রোগির পথ্য হিসেবে কবুতরের মাংস বেশ উপাদেয়। উন্নত জাতের কবুতর পালন করে অনেকের ভাগ্য পরিবর্তিত হচ্ছে। গ্রামে বা শহরে কবুতর পালন করে কেউ কেউ স্বাবলম্বী হয়েছে। বেকার সমস্যা সমাধানে কবুতর পালন অভূতপূর্ব ভূমিকা রাখতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *