Pigeon paramyxovirus (PPMV)

পিপিএমভি বা পিজন প্যারামক্সি ভাইরাস সাধারন পারামক্সি ভাইরাস থেকে ভিন্ন একটি স্ট্রেইন যা সাধারনতঃ শুধুমাত্র কবুতরকেই আক্রমন করে। এটি Avian paramyxovirus type 1 (PPMV1) এভিয়েন প্যারামক্সি ভাইরাস টাইপ ১ (পিপিএমভি১) নামেও পরিচিত।

👀 এটি একটি মারাত্মক #সংক্রামক রোগ যার আবির্ভাবে দ্রুতই লফটে সব কবুতর আক্রান্ত হয়ে পড়তে দেখা যায় এবং কোন কোন লফটে ৫০% থেকে ১০০% পর্যন্ত মৃত্যু হার দেখা যায়।

>> এ রোগের ইনকিউবেশন কয়েকদিন থেকে শুরু করে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে।
>> আক্রান্ত লফটে ডিহাইড্রেশন এবং স্ট্রেস মৃত্যু হার বাড়িয়ে দেয়।
>> ৬-১২ সপ্তাহের ভেতর স্বাভাবিক রিকভারী শুরু হয়ে যায়, তবে পূর্ন রিকভারী হতে আরো বেশী সময় লাগতে পারে।
>> নার্ভাস লক্ষন আজীবন থেকে যেতে পারে কিংবা রিকভার করলেও স্ট্রেস কালীন সময় ফেরত আসতে পারে।
>> রিকভারীর পরেও অনেক দিন কিংবা আজীবন কিছু কবুতরের সার্বক্ষনিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত থেকে যেতে পারে।

👀 কবুতর প্যারামক্সি ভাইরাস ইনফেকশনে আক্রান্ত হলে যে সসব লক্ষন দেখা যেতে পারে:

এ রোগের যে সব লক্ষন রয়েছে তা অন্য অনেক রোগকে নির্দেশ করতে পারে। একারনে প্যাথলজিকাল টেস্ট ছাড়া প্যারামক্সি ভাইরাস এর আক্রমন সনাক্ত করা খুব মুশকিল।

নীচে উল্ল্যেখিত লক্ষনগুলো অধিকাংশ আক্রান্তের ভেতর দেখা গেলেও সবগুলো লক্ষন একই সাথে নাও দেখা যেতে পারে। আবার একি সময়ে বিভিন্ন কবুতরে বিভিন্ন লক্ষন প্রকাশ পেতে পারে। সবগুলো লক্ষনই এক্সাইটমেন্টের কারনে আরো গুড় রূপ নিতে পারে।

(১) নার্ভাস সাইন:
-মাথা, ডানা এবং/অথবা চোখে সুক্ষ কম্পন
-ঘাড় বাঁকা হয়ে যাওয়া, উলটে যাওয়া, বা নীচে ঝুলে পড়া (মনে হবে যেন মাথার ভার নিতে পারছে না)
-খাবার দানা ঠোটে নিতে সমস্যা বা ঠোকর দিয়ে লক্ষভ্রস্ট হওয়া
-ঠোটে ধরা দানা খাবার মাথার ঝাকুনিতে পেছনে ফেলে দেয়া।
-টলটলায়মান হাটাচলা
-চক্রাকার হাটা
-ওড়ার সময় অপ্রত্যাশিত ডিগবাজী, সোজা উড়তে না পারা,
-ল্যান্ডিং এর সময় আছড়ে পড়া
(২) ডানা এবং/অথবা পা আংশিক প্যারালাইসিস হয়ে যাওয়া।
(৩) প্রচুর মুত্র সম্বলিত মল (অধিকাংশ সময় সবুজ হলেও ভিন্ন রংও হহতে পারে), বেশীরভাগ সময় প্রাথমিক পর্যায়ে পরিস্কার মুত্রের মাঝে সরু ভাঙ্গা ভাঙ্গা কঠিন মল (নুডুলসের ছোট টুকরোর মতো)
(৪) ঝিমানো: খাবারের প্রতি অনিহা, নড়াচড়ায় অনিহা।
(৫) বমি করা অথবা মাথা ঝাকিয়ে বমির চেষ্টা করা।
(৬) শ্বাস কষ্ট হওয়া বা হা করে শ্বাস নেয়া
(৭) চোখ দিয়ে পানি ঝড়া এবং/বা নাক দিয়ে পানি বের হওয়া।

👀যে ভাবে ছড়ায়:

এই ভাইরাস উপযুক্ত পরিবেশে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে এবং প্রধানত পাখিদের গমনাগমনের মাধ্যমে ছড়ায়।

সাধারনতঃ
আক্রান্ত পাখির বিষ্ঠা, ঝড়ে পরা পালক বা যা কিছু তার দেহ নির্গত সব কিছু থেকে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
বন্য কবুতর বা পাখি থেকে।
আক্রান্ত কবুতরের সাথে কবুতরের সরাসরি কন্টাক্টে ছড়ায়।
আক্রান্ত কবুতরের ডিমেও ভাইরাস ছড়াতে পারে।
ট্রান্সপোর্টার (খাচা, গাড়ী, বক্স) যা ঠিক মতো ডিস ইনফেক্ট করা হয় নি।
কবুতর ফেন্সিয়ার এর দেহ বা কাপড়ের মাধমে
খাবার এবং খাবার পানি
লফটে ব্যবহৃত আসবাব পত্রের মাধ্যমে

👀 প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রন:

উড়ানোর কবুতর বা যে সব কবুতর ছেড়ে পালা হয় তারাই সব থেকে বেশী আক্রান্ত হবার ঝুকিতে থাকে। কারন খোলা আকাশে বন্য কিংম্বা অন্য লফটের আক্রান্ত কবুতরের সংস্পর্শে খুব সহযেই এ রোগ ছড়াতে পারে।

তাই রোগ হবার আগেই প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কোন পথ নেই।

(১) প্রতিরোধের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে লফটের সকল কবুতরকে Pigeon PMV ভ্যাক্সিন দেয়া। আমাদের দেশে শুধুমাত্র ঢাকার রেসিং ক্লাবগুলতে এই ভ্যাক্সিন পাওয়া যায় যার নাম “চেভিভেক”। সাধারনত ৪/৫ সপ্তাহের বেবীকে প্রথম ডোজ দেবার পর ৪ সপ্তাহ বিরতী দিয়ে আবার বুস্টার ডোজ দেয়া হয়। ভ্যাক্সিন একবছর ক্রিয়াশীল থাকে। পরবর্তীতে এডাল্ট কবুতরকে বছরে ১ বার ভ্যাক্সিন করানো হয়।

যদিও পিজন প্যারামক্সি ভাইরাস পোল্ট্রির ND থেকে ভীন্ন একটি স্ট্রেইন, তারপরো অনেক ভেট বিশেষজ্ঞ Pigeon PMV ভ্যাক্সিন পাওয়া না গেলে বা ব্যবস্থা করা না গেলে ND ভ্যাক্সিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন। এ ব্যাপারে আপনার বিস্বস্ত ভেট ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিন।

(২) ভ্যাক্সিনেশন কোন ভাবেই বায়ো সিকিউরিটির পরিবর্তক নয়। বরং ভ্যাক্সিনেশনের পাশাপাশি উন্নত বায়োসিকিউরিটি মেইন্টেন করাই পরস্পরের পরিপুরক। তাই ভেট ডাক্তার বা অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে আপনার লফটের জন্য একটি উন্নত বায়োসিকিউরিটি পদ্ধতি অবলম্বন করুন।

👀 চিকিৎসা:

বছরের পর বছর পরীক্ষায় দেখা গেছে কোন ভাইরাস এর ওপর কোন এন্টিবাইওটিকই কাজ করে না। পিজন প্যারামক্সি ভাইরাসও এর ব্যতিক্রম নয়। অর্থাৎ এ রোগে আক্রান্ত কবুতরের কার্যতঃ কোন চিকিৎসা নেই।
আক্রান্ত কবুতরকে চিকিৎসা করার থেকে নার্সিং এবং সাপোর্টিভ কেয়ার এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সেকেন্ডারী ইনফেকশন এর চিকিৎসা জরুরী। এসময় অপ্রয়োজনী এন্টিবাইওটিক এর ব্যবহার কবুতরকে আরো দুর্বল করে দেয়া। তাই সাপোর্টিভ চিকিৎসার জন্য ভেট ডাক্তার, যারা পিজন প্যারামক্সি ভাইরাস হ্যান্ডেলে দক্ষ তাদের পরামর্শ নেয়া জরুরী।

#আক্রান্ত হয়ে পড়লে যা করনীয়:

👀 নার্সিং:

আক্রান্ত কবুতরকে আলাদা খাচায় উষ্ণ পরিবেশে রাখতে হবে। খাচার পাটাতনে নরম কাপড় বা টাওয়েল বিছিয়ে দেয়া দরকার। গভির বাটিতে খাবার দেয়া হলে খাবার খেতে কিছুটা সুবিধা হবে, বিশেষ করে যে সব কবুতর ঠোকর দিতে সমস্যা হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে হ্যান্ড ফীদিং জরুরী হবে। হ্যান্ড ফীডিং এর জন্য নরম খাবার উপকারী হবে। পর্যাপ্ত খাবার এবং পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। হ্যান্ড ফিডিং এর ক্ষেত্রে সব সময় উষ্ণ খাবার দিতে হবে।

(১) আক্রান্ত কবুতরের কক্সিডিওসিস, ট্রাইকোমোনিয়াসিস, এস্পারজিলোসিস ইত্যাদি রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তাই স্ট্রেস, শ্যাতশ্যাতে পরিবেশ থেকে দূরে রাখতে হবে। এবং এসব রোগের লক্ষন দেখা মাত্র দ্রুত চিকিৎসা দেয়া দরকার।
(২) সাধারনত ৬ সপ্তাহে রোগ তার চক্র পূর্ন করে এবং এ সময় পরে আক্রান্ত কবুতর আর রোগ ছড়ায় না এবং অন্য কোন কবুতরকে আক্রান্ত করবে না তবে নার্ভাস লক্ষন এবং গ্যাস্ট্রো-ইন্টেস্টিনাল সমস্যা আরো লম্ব সময় পর্যন্ত থেকে যেতে পারে।
(৩) ইমিউন সিস্টেম বাড়াবার জন্য মাল্টিভিটামিন দেয়া যেতে পারে
(৪) ডিহাইড্রেশন রোধে ইলেক্ট্রোলাইট স্যালাইন দেয়া জরুরী
(৫) খারাপ গাট ব্যক্টেরিয়া দূর করার জন্য প্রোবাইওটিক এর বব্যবহার কিছু উপকার দদিতে পারে।
(৬) অল্প পরিমান ক্যালশিয়াম এবং ভিটামিন ডি৩ কিছু উপকার দিতে পারে।
(৭) অভিজ্ঞ ভেট ডাক্তার এর পরামর্শ ছাড়া যে কোন এন্টিবাইওটিক ব্যবহার না করাই ভালো হবে। কারন এন্টিবাইওটিক রোগের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

👀 হাইজিন:

(১) যেহেতু এটা সংক্রামক রোগ তাই আক্রান্তকে আলাদা রাখা দরকার।
(২) প্রতিদিন লফট এবং খাবার পাত্র, পানির বাটি ইত্যাদি ডিসিনফেক্ট করা দরকার।
(৩) সুস্থ কবুতরের দেখাশুনার পর অসুস্থ কবুতরের পরিচর্যা করা উচিত। এতে ভাইরাস বহন কম হবার সম্ভাবনা আছে।
(৪) অসুস্থ কবুতর পরিচর্যার পর হাত মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলা দরকার। অসুস্থ কবুতর ধরার পর হাত না ধুয়ে আপন চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। এই ভাইরাস সাধারনতঃ মানুষের মাঝে সংক্রমিত হয় না তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিচর্যা কারী মৃদু জ্বর এবং চোখে অস্বস্থি অনুভব করতে পারেন।
(৫) অসুস্থ কবুতরের দেহ নির্গত কোন কিছু যাতে না ছড়াতে পারে তার ব্যবস্থা করা, প্রয়োজনে মাটি চাপা দেয়া।
(৬) কোন কবুতর মারা গেলে সেটি মাটি চাপা দেয়া।

আমার স্বল্প জানা/অভিজ্ঞতা থেকে শেয়ার করলাম। ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্টে বুঝিয়ে দিবেন প্লিজ।

মনে রাখতে হবে যে কবুতরটি পিজন প্যারামক্সি ভাইরাসাক্রান্তের লক্ষন প্রকাশ করছে না অথচ নিয়মিত ভাইরাস ছড়াচ্ছে সেটা অন্য সব কবুতরের জন্য সবথেকে বেশী বিপদজনক। যতদিনে সে লক্ষন প্রকাশ করা শুরু করবে ততদিনে লফটে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। তাই খুব ভালো করে প্রতিদিন আপনার কবুতরগুলোকে নিরীক্ষা করুন ভয়াবহ বিপর্যয় এড়াতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *